ডেটা ট্রান্সমিশন মেথড (Data Transmission Method)

- তথ্য প্রযুক্তি - তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি | | NCTB BOOK
9

ডেটা ট্রান্সমিশন মেথড (Data Transmission Method) বা ডেটা প্রেরণ পদ্ধতি হলো এমন কিছু প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে তথ্য বা ডেটা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পাঠানো হয়। এই প্রক্রিয়াগুলি সাধারণত বিভিন্ন মাধ্যম (যেমন, ওয়্যারড, ওয়্যারলেস) ব্যবহার করে কার্যকর হয়। ডেটা ট্রান্সমিশন মেথড প্রধানত দুই ধরনের হতে পারে: সিঙ্ক্রোনাস (Synchronous) এবং অ্যাসিঙ্ক্রোনাস (Asynchronous)। এছাড়াও ডেটা ট্রান্সমিশনের বিভিন্ন পদ্ধতি যেমন সিরিয়াল ও প্যারালাল রয়েছে। নিচে বিভিন্ন পদ্ধতি এবং তাদের বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করা হলো:

১. সিঙ্ক্রোনাস ট্রান্সমিশন (Synchronous Transmission):

  • সিঙ্ক্রোনাস ট্রান্সমিশন হলো একটি পদ্ধতি, যেখানে প্রেরক এবং প্রাপক উভয়ই একটি নির্দিষ্ট ঘড়ির সংকেত (Clock Signal) অনুসরণ করে ডেটা প্রেরণ করে। এতে ডেটা ব্লকের আকারে প্রেরণ করা হয়।
  • প্রেরক এবং প্রাপক উভয়ই একটি নির্দিষ্ট টাইমিং সিগন্যালের সঙ্গে সিঙ্ক্রোনাইজ থাকে।
  • উদাহরণ: হাই-স্পিড নেটওয়ার্ক, টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্কে সিঙ্ক্রোনাস ট্রান্সমিশন ব্যবহৃত হয়।

২. অ্যাসিঙ্ক্রোনাস ট্রান্সমিশন (Asynchronous Transmission):

  • অ্যাসিঙ্ক্রোনাস ট্রান্সমিশন হলো একটি পদ্ধতি, যেখানে ডেটা নির্দিষ্ট টাইমিং সিগন্যাল ছাড়াই প্রেরণ করা হয়। প্রেরক এবং প্রাপক স্বতন্ত্রভাবে কাজ করে, এবং প্রতিটি ডেটা ফ্রেমে স্টার্ট এবং স্টপ বিট থাকে।
  • এটি ছোট আকারের ডেটা ট্রান্সমিশনের জন্য ব্যবহার করা হয়।
  • উদাহরণ: সিরিয়াল পোর্ট, ইমেইল সিস্টেম।

৩. সিরিয়াল ট্রান্সমিশন (Serial Transmission):

  • সিরিয়াল ট্রান্সমিশন পদ্ধতিতে ডেটা বিট একের পর এক ধারাবাহিকভাবে প্রেরিত হয়। এতে ডেটা লাইন কম প্রয়োজন হয় এবং এটি দীর্ঘ দূরত্বে ডেটা প্রেরণের জন্য উপযুক্ত।
  • সিরিয়াল ট্রান্সমিশন উচ্চ নির্ভুলতা এবং কম জটিলতায় ডেটা প্রেরণ করে।
  • উদাহরণ: ইউএসবি, মোবাইল ডেটা ট্রান্সমিশন।

৪. প্যারালাল ট্রান্সমিশন (Parallel Transmission):

  • প্যারালাল ট্রান্সমিশন পদ্ধতিতে একাধিক ডেটা বিট একসঙ্গে প্রেরণ করা হয়। এটি সাধারণত স্বল্প দূরত্বে ব্যবহার করা হয়, কারণ এতে একাধিক ডেটা লাইন প্রয়োজন।
  • প্যারালাল ট্রান্সমিশন দ্রুত ডেটা প্রেরণ করতে সক্ষম, তবে দূরত্ব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সংকেতের সময় ভিন্নতা দেখা দিতে পারে।
  • উদাহরণ: প্রিন্টার কেবল।

৫. সিমপ্লেক্স (Simplex Transmission):

  • সিমপ্লেক্স ট্রান্সমিশন হলো একমুখী যোগাযোগ পদ্ধতি, যেখানে ডেটা শুধুমাত্র একদিকে প্রেরণ করা যায়। প্রাপক কেবলমাত্র তথ্য গ্রহণ করতে পারে, কিন্তু প্রেরকের কাছে তথ্য পাঠাতে পারে না।
  • উদাহরণ: রেডিও ব্রডকাস্ট, টেলিভিশন ব্রডকাস্ট।

৬. হাফ-ডুপ্লেক্স (Half-Duplex Transmission):

  • হাফ-ডুপ্লেক্স ট্রান্সমিশন হলো দ্বিমুখী যোগাযোগ পদ্ধতি, কিন্তু একই সময়ে ডেটা প্রেরণ এবং গ্রহণ করা যায় না। একদিকে ডেটা প্রেরণ বন্ধ হলে, অন্য দিকে ডেটা পাঠানো সম্ভব।
  • উদাহরণ: ওয়াকি-টকি।

৭. ফুল-ডুপ্লেক্স (Full-Duplex Transmission):

  • ফুল-ডুপ্লেক্স ট্রান্সমিশন হলো দ্বিমুখী যোগাযোগ পদ্ধতি, যেখানে একসঙ্গে দু'দিক থেকে ডেটা পাঠানো এবং গ্রহণ করা যায়। এটি কার্যকারিতা এবং যোগাযোগের গতি বাড়ায়।
  • উদাহরণ: টেলিফোন কল, মোবাইল নেটওয়ার্ক।

৮. এনকোডিং পদ্ধতি (Encoding Methods):

  • ডেটা ট্রান্সমিশনের সময় বিভিন্ন এনকোডিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, যা ডেটাকে সংকেতে পরিণত করে। কিছু সাধারণ এনকোডিং পদ্ধতি হলো:
    • ন্যায়কৃত এনকোডিং (Non-Return to Zero - NRZ): বিট মানের ওপর ভিত্তি করে সংকেত অবস্থান ধরে রাখা হয়।
    • ম্যানচেস্টার এনকোডিং: বিট পরিবর্তনের সময় সংকেতের উত্থান বা পতন ঘটানো হয়।

৯. মাল্টিপ্লেক্সিং (Multiplexing):

  • মাল্টিপ্লেক্সিং হলো একটি পদ্ধতি, যা একাধিক ডেটা সংকেতকে একটি একক চ্যানেলের মাধ্যমে প্রেরণ করে। এটি ব্যান্ডউইথের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করে।
  • উদাহরণ: ফ্রিকোয়েন্সি ডিভিশন মাল্টিপ্লেক্সিং (FDM), টাইম ডিভিশন মাল্টিপ্লেক্সিং (TDM)।

১০. মডুলেশন (Modulation):

  • মডুলেশন হলো ডেটা সংকেতকে চ্যানেলে প্রেরণের জন্য অভিযোজিত করা। এতে মূল ডেটা সংকেতকে একটি বাহক তরঙ্গে স্থানান্তরিত করা হয়। কিছু সাধারণ মডুলেশন পদ্ধতি হলো:
    • অ্যামপ্লিটিউড মডুলেশন (AM): সংকেতের অ্যামপ্লিটিউড পরিবর্তন করা হয়।
    • ফ্রিকোয়েন্সি মডুলেশন (FM): সংকেতের ফ্রিকোয়েন্সি পরিবর্তন করা হয়।

ডেটা ট্রান্সমিশনের সুবিধা:

১. দ্রুত তথ্য আদান-প্রদান:

  • ডেটা ট্রান্সমিশন পদ্ধতি ব্যবহার করে তথ্য খুব দ্রুত এবং কার্যকরভাবে প্রেরণ করা যায়।

২. দীর্ঘ দূরত্বে ডেটা প্রেরণ:

  • ফাইবার অপটিক এবং স্যাটেলাইট যোগাযোগের মাধ্যমে দীর্ঘ দূরত্বে ডেটা ট্রান্সমিশন সম্ভব।

৩. বিপুল ডেটা ট্রান্সফার:

  • মাল্টিপ্লেক্সিং এবং মডুলেশন পদ্ধতির মাধ্যমে একাধিক তথ্য একসঙ্গে প্রেরণ করা যায়, যা তথ্য স্থানান্তরকে আরও দ্রুত করে।

ডেটা ট্রান্সমিশনের সীমাবদ্ধতা:

১. নিরাপত্তা ঝুঁকি:

  • ডেটা ট্রান্সমিশনের সময় নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকে, যেমন হ্যাকিং বা তথ্য চুরি। এনক্রিপশন এবং নিরাপত্তা প্রোটোকল ব্যবহার করা জরুরি।

২. সংকেতের ব্যাঘাত:

  • দীর্ঘ দূরত্বে ডেটা ট্রান্সমিশনের সময় সংকেতের ক্ষতি বা ব্যাঘাত হতে পারে, যা ডেটা গুণগত মান কমাতে পারে।

সারসংক্ষেপ:

ডেটা ট্রান্সমিশন মেথড হলো ডেটা স্থানান্তরের বিভিন্ন পদ্ধতি, যা যোগাযোগ ব্যবস্থায় কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। সিরিয়াল, প্যারালাল, সিঙ্ক্রোনাস, এবং অ্যাসিঙ্ক্রোনাস পদ্ধতিগুলি নির্দিষ্ট প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতিগুলি তথ্য স্থানান্তরের গতি, কার্যকারিতা এবং নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করে, যদিও নিরাপত্তা এবং ব্যাঘাত সংক্রান্ত সমস্যাও বিদ্যমান।

Content added By
Content updated By
Promotion